শুক্রবার, ৬ জুন চিনাব রেলওয়ে ব্রিজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ আর্চ রেলব্রিজ। জম্মুকে শ্রীনগরের সঙ্গে যুক্ত করছে এই সেতু। চিনাব নদীর তলদেশ থেকে ৩৫৯ মিটার উঁচু। ১,৩১৫ মিটার দীর্ঘ। সেতুটি আইফেল টাওয়ারের থেকেও ৩৫ মিটার উঁচু। এই সেতুটির আয়ু ধরা হয়েছে ১২০ বছর। ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার গতির ঝড় এবং ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ্য করতে সক্ষম এই সেতু তৈরিতে খরচ হয়েছে ১,৪৮৬ কোটি টাকা।
এই সেতু নির্মাণের নেপথ্যে রয়েছেন এক ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার — প্রফেসর মাধবী লতা। বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স (IISc)-এর অধ্যাপিকা। তিনি চিনাব সেতুর নকশা থেকে শুরু করে নির্মাণকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
১৯৯২ সালে জওহরলাল নেহরু টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি.টেক করেন। এরপর এনআইটি ওয়ারাঙ্গাল থেকে এমটেকে গোল্ড মেডেল-সহ পাশ করেন। এরপর আইআইটি মাদ্রাজ থেকে ২০০০ সালে পিএইচডি করেন। বর্তমানে তিনি IISc-তে সিনিয়র প্রফেসর। ভূতাত্ত্বিক গবেষণায় তাঁর বহু অবদান রয়েছে।
২০২১ সালে তিনি 'বেস্ট ওম্যান জিওটেকনিকাল রিসার্চার' পুরস্কারে সম্মানিত হন। ২০২২ সালে তাঁর নাম ওঠে STEAM অফ ইন্ডিয়া-র সেরা ৭৫ জন মহিলার তালিকায়। এছাড়াও তিনি IISc-এর এসকে চট্টোপাধ্যায় এক্সেলেন্ট রিসার্চার অ্যাওয়ার্ড, SERB POWER ফেলোশিপ এবং কর্নাটক বুক অব রেকর্ডস-এর উইমেন অ্যাচিভার্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
২০২৫ সালের ২৮ মে, ইন্ডিয়ান জিওটেকনিকাল জার্নাল-এর একটি বিশেষ সংখ্যায় তাঁর একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। নাম ছিল, 'Design As You Go: The Case Study of Chenab Railway Bridge'। সেখানে তিনি ১৭ বছরের অভিজ্ঞতা ও নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিশদে আলোচনা করেছেন।
চিনাব ব্রিজ উদ্বোধনের পর IISc সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখে, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে চিনাব ব্রিজ উদ্বোধন করেছেন, তার নেপথ্যে অধ্যাপক মাধবী লতা ও তাঁর দলের বড় ভূমিকা রয়েছে। আমরা গর্বিত।'
অর্থনীতিবিদ ও লেখক সঞ্জীব সান্যাল লেখেন, 'মাধবী লতা চিনাব ব্রিজ নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত সেরা ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে অন্যতম। ১৭ বছর আগে এই প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন।'
এই ব্রিজ তৈরিতে আইফেল টাওয়ারের থেকেও চারগুণ বেশি স্টিল ব্যবহার হয়েছে। পাহাড়ি ও ভূমিকম্প প্রবণ দুর্গম অঞ্চলে এমন প্রকল্পের বাস্তবায়নে অধ্যাপক মাধবী লতা ও তাঁর টিমের প্রত্যেকের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।