ফ্যাক্ট চেক: জলপাইগুড়িতে হিন্দু মা ও মেয়েকে ধর্ষণের পর খুন? না, ভিডিওটি বাংলাদেশের

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি জলপাইগুড়ি কিংবা ভারতের নয়। বরং সেটি বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার যুগীরঘোপা গ্রামে এক মহিলা ও তার মেয়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের দৃশ্য।

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: জলপাইগুড়িতে হিন্দু মা ও মেয়েকে ধর্ষণের পর খুন? না, ভিডিওটি বাংলাদেশের

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে একটি ঘরের ভিতরে পাশাপাশি দুটি দড়ি থেকে এক মহিলা ও একটি মেয়ের ঝুলন্ত দেহ দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, জলপাইগুড়ির নাগরকাটায় এক হিন্দু মহিলা ও তার মেয়েকে ধর্ষণের পর গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করেছে মুসলিম সম্প্রদায়ের অপরাধীরা।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “জলপাইগুড়ির নাগরকাটায় হিন্দু মা মেয়েকে একসাথে ধর্ষণ করে ঝুলিয়ে দিয়ে গেছে জিহাদীরা... জাগো হিন্দু জাগো।” (সব বানান অপরিবর্তিত)

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি জলপাইগুড়ি কিংবা ভারতের নয়। বরং সেটি বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার যুগীরঘোপা গ্রামে এক মহিলা ও তার মেয়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের দৃশ্য।

সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে

ভাইরাল দাবি ও ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি ফেসবুক পেজে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে,  “কিছু বলার ভাষা নেই 🥲🥲 দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় মা ও মেয়ের একই রশিতে ঝুলন্ত লাশ। এই দৃশ্য দেখার পরে কোন ভাষা খুঁজেই পাচ্ছি না।” এই একই তথ্য-সহ অন্য একাধিক পেজ থেকেও ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে।

এরপর উক্ত সূত্র ধরে এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করলে ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর একাধিক বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই সব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বরে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার যুগীরঘোপা গ্রামের বেনুপাড়ায় নিজের বাড়ি থেকে সুজাতা রানী রায় (২৪) এবং তার মেয়ে নীলাদ্রি রানী রায়ের (৬) ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে বাংলাদেশ পুলিশ। পাশাপাশি ঘর থেকে ‘আমার মৃত্যুতে কেউ দায়ী নয়’ লেখা একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়। তবে মৃত গৃহবধূর বাবার বাড়ির লোকজন এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন। অন্যদিকে স্ত্রী-সন্তা‌নের মৃত্যুর পর থেকে পলাতক নীলাদ্রির স্বামী ভক্ত রায়।

Advertisement

পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর অপর এক বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম প্রতিদিনের বাংলাদেশের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ভাইরাল ভিডিওর একটি স্ক্রিনশট-সহ এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে মৃতার বাবা ও দাদাকে তাদের মেয়ে এবং নাতনির মৃত্যুর জন্য মেয়ের স্বামী ভক্ত রায়কে দায়ী করতে দেখা যাচ্ছে। মৃতার বাবা দাবি করেছেন, তার মেয়ে ও নাতনিকে নির্যাতন করে হত্যা করার পর গলায় ফাঁসি দিয়ে ঘরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জিন্নাহ আল মামুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, ‘দেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। এটি আত্মহত্যা না খুন তা তদন্তে উঠে আসবে।’ তবে আমরা আমাদের অনুসন্ধানে মুসলিমদের তরফে সুজাতা ও তার মেয়ে নীলাদ্রিকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে বলে উল্লেখিত কোনও তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি।

তবে এরপর সম্প্রতি জলপাইগুড়ি জেলায় কোনও হিন্দু মহিলা ও তার মেয়েকে ধর্ষণের পর গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়েছে কিনা সেই সংক্রান্ত তথ্য জানতে আমরা জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আইপিএস সামীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “জলপাইগুড়ি জেলায় সম্প্রতি এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। তবে ভাইরাল ভিডিওটি আমাদেরও নজরে এসেছে। এটি বাংলাদেশের ঘটনা। এর সঙ্গে জলপাইগুড়ির কোনও সম্পর্ক নেই। যারা ফেক নিউজ ছড়াচ্ছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।”

এর থেকে প্রমাণ হয় যে, বাংলাদেশে মা ও মেয়ের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধারের অসম্পর্কিত পুরনো ভিডিও জলপাইগুড়ির সঙ্গে মিথ্যে সম্পর্ক জুড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করা হচ্ছে।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook users

দাবি

ভিডিওতে জলপাইগুড়ির নাগরকাটায় এক হিন্দু মহিলা ও তার মেয়েকে ধর্ষণের পর গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করেছে মুসলিম সম্প্রদায়ের অপরাধীরা।

ফলাফল

ভিডিওটি জলপাইগুড়ি কিংবা ভারতের নয়। বরং সেটি বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার যুগীরঘোপা গ্রামে এক মহিলা ও তার মেয়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের দৃশ্য।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement